গল্প

তাহমিনা শিল্পী

পরিহাস

১ম লাশঃ (আগ বাড়িয়ে মুচকি হেসে) কি স্যার কেমন আছেন? কেমন লাগতাছে এইখানে?

২য় লাশঃ (বিরক্ত হয়ে কপাল কুচকে) এটা কি ভালো লাগার মত কোন জায়গা। অসহ্য….

দুর্ভাগ্য আমার। ঢাকা শহরে তিনটা বাড়ি,পাঁচটা গাড়ি আর দুইটা গার্মেন্টসের মালিক আমি। কোথায় বড়লোকি কোনো রোগে মারা যাবো। হুলুস্থল করে অন্তত দেড় হাজার লোক জানাজা পড়বে। টেলিভিশনে আমার মৃত্যুর খবর প্রচার হবে। খবরের কাগজে লেখালেখি হবে। স্মরণ সভা হবে। অথচ মরতে হল করোনার মত ছ্যাচরা রোগে। নইলে কি আর আমাকে এখানে পড়ে থাকতে হয়?
যাচ্ছে তাই….

১ম লাশঃ (বিদ্রুপ করে) তা স্যার করোনা হইলো ক্যামনে আপনের?

২য় লাশঃ লকডাউন চলাকালীন গার্মেন্টস খুলে একদিন পরিদর্শন করতে গেলাম।এক রাবিশ কর্মচারী বেতনের জন্য অনুনয় বিনয় করে পা জড়িয়ে ধরলো। আমি লাথি মেরে দূরে ফেলে দিলাম।দুদিন পরে শুনলাম ওই হা-ভাতেটা করোনায় মারা গেছে। ছোটলোকটা ইচ্ছে করে রোগ গোপন করে আমাকে আক্রান্ত করেছে। সুযোগ পেলে ওর চৌদ্দগুষ্ঠিকে বুঝিয়ে দিতাম কত ধানে কত চাল।

একটু নাক কুচকে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
তা তুমি মরলে কি করে? না খেতে পেয়ে নিশ্চয়ই? মানে পোশাক দেখে মনে হয় না তেমন ভালো ঘরের লোক।

১ম লাশঃ কপালতো আমারও মন্দ। নইলে কি আর আপনের মত ধনী সচেতন লোকের কাছ থাইকা আমারে করোনায় ধরে?

২য় লাশঃ কি বলছো তুমি? আমার কাছ থেকে মানে! মুখ সামলে কথা বলো।

১ম লাশঃ আরে ক্ষেপেন ক্যান! আমারে চেনেন নাই,আমি কিন্তু আপনেরে ঠিকই চিনছি। আগে আমার ঘটনাটা শোনেন। তারপর চিল্লাইয়েন।

ছোট্ট একটা ফুলের দোকান ছিল। আয় রোজগার যা ছিল তাতে ঢাকা শহরে দুই রুমের একটা টিনসেড বাসায় পরিবার নিয়া ভালোই ছিলাম। লকডাউনে সব বন্ধ হয়ে গেলে একমাস কোনরকমে সংসার চললেও তারপর আর চলছিল না। চারদিন না খাইয়া থাকার পর একদিন দেখলাম মহল্লার মোড়ে লোকজনের ভীড়, ত্রাণ দিতাছে। হাত পাইতা সাহায্য নিতে বিবেকে বাঁধলেও শেষমেষ সন্তানগো কথা ভাইবা গেলাম।

আপনার হাত থাইকা সাহায্যের ব্যাগ নিলাম। আপনে মুখের মাস্কটা সরাইয়া দিলেন। সাংবাদিকরা ফটো তুললো। তার কয়দিন বাদে আবার টেলিভিশনের খবরে দেখলাম আপনের করোনা হইছে। অবস্থা খুবই খারাপ।

ভাগ্যের পরিহাসে আজকে আমাগো একটাই পরিচয়। আমরা লাশ। দুইজনে একটা ঘরেই আছি, পাশাপাশি।

অতঃপর দুজনই চুপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *