রবীন বসু
আয় আয় চৈ—চৈ
আয় আয় চৈ চৈ… আয় আয় চৈ চৈ…
লাঠিতে ভর করে ভাঙা মাজা নিয়ে পুকুর পাড় দিয়ে হাঁটছিল গৌরবুড়ি। তার পোষা হাঁস দুটোকে ডাকছিল। আষাঢ়ের দীর্ঘবেলা মাড়িয়ে সন্ধে প্রায় আসে আসে। আলো কমে আসছে। এখনও তারা ঘরে ফিরল না। অন্য দিন তো ঠিক চলে আসে এ সময়। রোজ সকালে ওদের প্যাঁক প্যাঁক ডাক শুনে ঘুম ভাঙে বুড়ির। সদর দরজায় জল ছিটিয়ে ঝাঁটা হাতে ঝাঁট দিতে গেলেই ওরা পায়ে পায়ে জড়ায়। বুঝতে পারে ওদের খিদে পেয়েছে। তাড়াতাড়ি ঝাঁট শেষ করে হালতু বাজার থেকে আনা গমের ভুষি রাতে রেখে দেওয়া বাসি ফ্যানের সঙ্গে মিশিয়ে হাঁসদুটোকে খেতে দেয়। তারা লেজ নেড়ে নেড়ে গলা ফুলিয়ে পরম আহ্লাদে খায়। বুড়ি যখন নিজের বাসি বাসন নিয়ে ঘাটে মাজতে যায় তখন ওদের ডাকে। ওরাও হেলতে দুলতে পিছন পিছন যায়। তারপর সারাদিন জলে জলে। পুকুরের পাড়ের ধারের কাদায় ঠোঁট ডুবিয়ে গেঁড়িগুগলি খুঁজে খুঁজে খায়। কখনও দু’জনে খুনসুটি করে। দুপুরের দিকে জল থেকে পাড়ে উঠে ডানায় মুখ গুঁজে একটু ঘুমিয়েও নেয়। আবার বেলাশেষে নিজেরাই উঠে আসে ঘরে।
আজ কী যে হল! ওরা এখনও জল থেকে উঠল না। গৌরবুড়ি পুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। কষ্ট করে মাজাটা সোজা করে বাঁহাত দিয়ে বাঁচোখ আড়াল করে জলের দিকে তাকায়। ডান চোখে ছানি। বলে বলেও ছেলেরা বিনা পয়সার ক্যাম্পে নিয়ে গেল না ছানি কাটাতে। তাই বাঁ চোখটাই ভরসা। কিন্তু না, সারা পুকুরে চোখ ঘুরিয়ে কোত্থাও দেখতে পেল না হাঁসদুটোকে।
[] []
ঊাপমায়ের দেওয়া নাম ছিল মঙ্গলা। বিয়ে হয়েছিল কসবা রথতলার গৌর মন্ডলের সঙ্গে। মানুষটা খুব সৎ আর খাটুনে ছিল। ভালোবাসতো তাকে। স্বামী মারা যাবার পর তার নাম হয়ে গেল গৌরবুড়ি। আজ আর কেউ তার পুরনো নাম মনে রাখেনি। ছেলেবুড়ো সবাই এখন গৌরবুড়ি নামেই ডাকে। বেঁচে থাকার অবলম্বন ওই হাঁসদুটো। আর বিধবা ভাতার ছ’শো টাকা। গ্রাম না, এই কলকাতা শহরের বুকে কসবা অঞ্চলের রানি রাসমণির পুকুরের জলে হাঁস পুষে, তার ডিম বেচে গৌরবুড়ির মুখে অন্ন ওঠে । দুই ছেলে এক মেয়ে। বুড়ো বেঁচে থাকতে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে গেছে। সাবান কারখানায় কাজ করত। সেই সুবাদে ট্রেড ইউনিয়ন করা। পার্টির দাদাদের ধরেছিল একফালি জায়গার জন্য। কসবা অঞ্চলে রথতলায় রানি রাসমণির অনেক ভেস্টিড ল্যান্ড ছিল। সরকার থেকে পাট্টা পেয়েছিল দু’কাঠা জমি। ওই বড় পুকুরের ধার ঘেঁষে। একটা ছোট্ট টালির বাড়ি তুলেছিল গৌরহরি। দেয়াল ইটের। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছিল। কিন্তু মেয়ের বিয়ের পর পরই হঠাৎ করে কারখানা লকআউট হয়ে গেল। কোর্ট—কাছারি হল। কিন্তু ক্ষতিপূরণ কিছুই পেল না। সংসার চালাতে ঘুরে ঘুরে ঘটিগরম বিক্রি করতে শুরু করল। সারাদিন হাঁটা আর রোদবৃষ্টিতে ভিজে বুকে অসুখ ধরল। সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে কার্ড করে স্বামীকে দেখিযে়ছিল মঙ্গলা। ডাক্তারবাবু বলেছিল, “আপনার স্বামীর হার্টে ব্লকেজ দেখা দিয়েছে। রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় অপারেশন করতে হবে। খরচ আছে ।”
বড় ছেলেকে বলতে বলল, “আমার তো ওই সামান্য মাইনে। কী করি বলতো মা!” ছোট ছেলে তখন বেকার। নতুন জামাইয়ের কাছে টাকা চাওয়াও যায় না। অগত্যা মঙ্গলা ঠিক করল নিজের গলার সরু হার, কানের দুল আর স্বামীর বিয়ের আংটি বেঁচে দেবে। কিন্তু তাতেই বা কতটা হবে! তবু চেষ্টা তো করতে হবে। এরওর কাছে হাত পেতে কিছু জোগাড়ও করেছিল। কিন্তু মঙ্গলার সব চেষ্টা ব্যর্থ হল। কপালও খারাপ। একদিন শেষ রাতে ঘুমের মধ্যেই সব শেষ। এতবড় সংসারে নিঃসহায় একা হয়ে গেল মঙ্গলা।
[] []
তিন দিন পর আজ কলমিশাক সেদ্দ দিয়ে দুটো ভাত মুখে তুলেছে গৌরবুড়ি। চাল ছিল না ঘরে। মুড়ি আর বাসি পাঁউরুটি খেয়ে দিন কেটেছে। স্বামী মারা যেতে ছেলেরা দুটো ঘর দখল নিল। বুড়ি মার জায়গা হল উঠোনের এক কোণে। মাথার ওপর খড়ের চাল মাটির দেয়াল। বউদুটো এমন ব্যবহার শুরু করল যেন ওদের বাপের বাড়ি থেকে এ সংসার তুলে এনেছে। স্বামী—স্ত্রী মিলে বড় রাস্তা থেকে মাথায় করে ইট বালি সিমেন্ট বয়ে গতরের ঘাম ঝরিয়ে ঘর দুটো তুলেছিল। লোকটা রাত দশটা পর্যন্ত ওভারটাইম করে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরত। বড় ছেলেটাকে পার্টির বাবুদের হাতেপায়ে ধরে একটা প্লাস্টিক কারখানায় ঢুকিয়েও দিল। বুক দিয়ে লেপামোছা তুলসীতলায় সন্ধে দিয়ে নিজের সংসার সাজিয়েছিল মঙ্গলা। ছেলেদের বিয়ে দিল। আজ সেই সংসার তার না। বেদখল হয়ে গেছে। বাতিল জিনিসের মতো উঠোনের এক কোণে পড়ে আছে। অছ্যেদ্দার জীবন। অভিমান আর এক না—বোঝানো কষ্টে বুড়ি ছেলেদের সংসার থেকে নিজেকে ভেন্ন করে নিয়েছে। নিজের অন্ন নিজেই জোটায়। এবার কী এক নতুন রোগ এসেছে দেশে। খুব ছোঁয়াচে। বসন্ত রোগের মত। করোনা। মানুষ মরছে খুব। তাই বাজার হাট দোকানপাট সব বন্ধ করে দিয়েছে সরকার থেকে। গাড়িঘোড়া চলছে না। মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলামেশা বন্ধ। মুখে হাতে কীসব পরতে হচ্ছে। খোলা শুধু রেশন দোকান। ভাঙা মাজা নিয়ে মুখে আঁচল চাপা দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। দুপুর গড়িয়ে যেতে বিপিএল কার্ড দেখিয়ে দু’কেজি চাল, অল্প ডাল আর আলু পেয়েছে। আজ সকালে পোষা হাঁসদুটো বড় পুকুরে ছাড়তে গিয়ে দেখে বেশ কচি কচি কলমি শাক লতিয়ে উঠেছে। হাঁটু জলে নেমে কোঁচড় ভরে কলমিশাক তুলে এনেছে বুড়ি। যার কাছে ডিম বেচে হালিমনবিবি ট্রেন বন্ধ থাকায় আসছে না। ছোট ছেলের বউ এমনিতে খোঁজ নেয় না শাউড়ি কী খেল না—খেল। কাল সন্ধেবেলা এসে বলল, “ঘরে মাছ সবজি ডাল কিচ্ছু নেই। ক’টা ডিম দেবে, মা? তোমার ছেলে পাঠাল।”
ছোটটার প্রতি একটু বেশি মায়া ছিল বুড়ির। কাজের মাঝে সব সময় আঁচল ধরে ঘ্যান ঘ্যান করত। রোগাপাতলাও ছিল। সবার থেকে একটু বেশি যত্ন পেত। ছ’টা ডিম ছিল দিয়ে দিল। আর দুটো আলু। বাকি ডাল আলু আলাদা করে হাঁড়িতে তুলে রেখে দেয় পরের দিনগুলোর জন্য। আজ কলমিশাক সেদ্দ করে নুন, একফোঁটা সরষের তেল আর পোড়া লঙ্কা দিয়ে মেখে গরম গরম ভাত খায় বুড়ি। বড্ড সোয়াদ।
[] []
———”বলি, ও সপোনদা, এমনি নিরামিষ আর কদ্দিন চলবে? জীবনটা তো খার হয়ে গেল। পাতা নেই। ঢুক্কুস নেই! বাঁচা যায়! শালা লকডাউন!” কেমন নি®প্রভ আর হতাশা দেখাল খোঁড়া বাদলকে। ছোটবেলায় পোলিও হওয়া বাঁ—পা’টা একটু ছোট। কমজোরী। লেংচে হাঁটতে হয়। তাই ওই নাম। লেদ কারখানায় কাজ করে। লকডাউনে বন্ধ। এখন তরুণ সংঘের ক্লাব ঘরে এসে সকালটা কাটায়।
যাকে উদ্দেশ্য করে বলা সেই স্বপন তখন একটা বিড়ি ধরিয়ে টানছিল। অটো চালায়। ওর অটোও বন্ধ। তাই ক্লাব ঘরের আড্ডায় সেও। তাদের মত আরও অনেকে আছে। কখনও তাস খেলা হয়। ক্যারাম। গল্পগুজবও হয়। নেশা। আবার অনেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে জুলজুলে চোখে মোবাইলে পর্ণোসাইট দেখে। অটোওলা স্বপন এবার উঠে দাঁড়িয়ে হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে বল্ল, “ঠিক বোলেচিস বাদল। গতরে তো ঘুণ ধরে গেল। আজ আর গলায় না ঢাললে চলছে না।”
এমন সময় পাড়ার উঠতি প্রোমোটার অনুপ বাইরে হিরো হোন্ডা রেখে ক্লাব ঘরে ঢোকে। সবাই হৈ হৈ করে ওঠে। “দাদা এসেছে! দাদা এসেছে!” এক জন প্লাস্টিকের চেয়ার এগিয়ে দেয়। খোঁড়া বাদল সামনে গিয়ে বলে, “আজ আমাদের একটা আবদার রাখতে হবে দাদা।”
বাদলের মাথায় একটা চাঁটি মেরে অনুপ বলে, “বলে ফ্যাল কী আবদার।”
স্বপন হাত কচলাতে কচলাতে সামনে এগিয়ে এসে বলে, “আজ বেলা বারোটা থেকে মালের দোকান সব খুলবে। পেটে শ্যাওলা পড়ে আছে দাদা। রুট বন্ধ, পকেটও খালি। আমাদের দুটো বোতলের ব্যবস্থা করে দাও।”
অনুপ একটু ভাবে। এদের দিয়ে অনেক কাজ হয়। অনেক বাগড়াবাওল মেটাতে হয়। পুরনো বাড়ি হাতবদল করতে কখনও লোভ দেখাতে হয়। কখনও বা ভয়। তখন ক্লাবের ছেলেদের কাজে লাগায়। তাই হাতে রাখাই ভালো। পকেট হাতড়ে একটা দু’হাজার টাকার নোট বের করে স্বপনের হাতে দেয়।
———”নে। দুটো বড় খোকা আনিস। আমি কিন্তু আসব। আর চাটের ব্যবস্থা রাখিস।” পুরো ক্লাবঘর জিবের চকাচক আওয়াজে ম ম করে উঠল।
প্রমোটার অনুপ হোন্ডার আওয়াজ তুলে চলে যেতেই হকার শিবনাথ পানুকে ডাকল জানলার পাশে। “এই, দ্যাখ্ দ্যাখ্, দুটো হাঁস কেমন বড় পুকুরের জলে ভাসছে।”
পানু একবার পুকুরের জলের দিকে তাকাল। সবুজ শ্যাওলারঙা থির জলে হাঁসদুটো নিজেদের ছায়া ফেলে ভাসছে। সে বলে, “পশ্চিম পাড়ার কাত্তিক, যে প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করে। ওর মা গৌরবুড়ির পোষাহাঁস ও দুটো ।”
শিবনাথ জিবে টা—আ টা—আ আওয়াজ তুলে বল্ল, “ঝাল দিয়ে হাঁসের মাংসের চাট খুব ভালো হয়। তোফা!”
[] []
সহদেব রিক্সা চালায়। বড় পুকুরের পুব পাড়ে তার দোচালা টালির ঘর। মাটির দেয়াল। সংসারে বউ ছাড়া এক ছেলে এক মেয়ে। সারা সকাল রিক্সা টেনে দুপুরে বাড়িতে আসে খেতে। খেয়ে একটু ভাতঘুম দিয়ে আবার বিকেলের দিকে রিক্সা নিয়ে বের হয়। মেয়ে চাঁপা আর ছেলে বুলু স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির পেছনের কলাবাগানে পাড়ার ছেলে মেয়েদের সঙ্গে খেলছে। সহদেবের বউ বিমলা বাড়ির টুকিটাকি কাজ সারছে। এমন সময় ছেলেমেয়েদের হইহট্টগোল। একটা দল ঢুকে এল তার উঠোনে। সবার আগে তার মেয়ে চাঁপা। বিমলা ব্যস্ত হয়ে চাঁপার উদ্দেশ্যে বলে, ” চুপ চুপ। তোর বাবা সবে শুয়েছে। কাঁচাঘুম ভেঙে গেলে উঠে বকবে। চুপ সবাই। কী হয়েছে বল, গোল কচ্ছিস কেন ?”
চাঁপা এগিয়ে আসে তার মায়ের দিকে। তার পিছনে সবাই। তারপর ডান হাত উঁচু করে ধরে মায়ের সামনে। বিমলা দেখে এক গোছা হাঁসের পালক। অবাক হয়।
———”কিরে, কোথায় পেলি হাঁসের পালক?”
———”আমাদের কলাবাগানে পড়েছিল। কারা ফেলে দিযে় গ্যাচে। তুমি দেখবে চল, কাটা মাথা, পা সব পড়ে আছে।”
———”চ’ তো দেখি।” বিমলা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দৌড়ে বাগানে যায়। হ্যাঁ, ওদের কথা ঠিক। হাঁসদুটোর কাটা মাথা, পা ছাল আর পালক পড়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কারা ফেলে গেল? হাঁস বলতে তো পশ্চিমপাড়ার গৌরবুড়ির দুটো ছিল। এই পুকুরের জলেই ঘুরে বেড়াত। বিমলা নিচু হয়ে কাটা মাথা দেখেই বুঝতে পারল, এ হাঁস ওই গৌর— জেঠিমার। কিন্তু কারা ওই বেওয়া মানুষটার এত বড় সর্বনাশ করল! ভিড়ের ভিতর থেকে কিশোর সুবল এগিয়ে এল।
———”কাকিমা, আমি দেখেচি, ওই তরুণ সংঘের ছেলেরা হাঁস দুটো ধরে মেরেচে। তারপর মাংস নিয়ে ছাল পালক তোমাদের বাগানে ফেলে চলে গেছে। ওরা ফিস্টি করবে।”
———”হায় ভগবান! বলি, ও চাঁপা। ছুটে যা। তোর ঠাম্মাকে খপরটা দে। বুড়ির পেট চলত এই হাঁসের ডিম বিক্রি করে।
[] []
ক’দিনের শুকনো পেটে ভাত পড়ায় শরীরটা ভারি হয়ে একটু ঝিমুনি এসেছিল। কখন ঘুমিয়ে পড়ল বুঝতেই পারেনি। ঘুম ভাঙতে বুড়ি ধড়মড়িয়ে উঠে বসে। বেলা একদম পড়ে গ্যাছে। হাঁসদুটো এ সময় পুকুর থেকে উঠে এসে উঠোনে প্যাঁক প্যাঁক করে। আজ আসেনি। বুড়ি দ্রুত লাঠি হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে পুকুর পাড়ে। আয় আয় চৈ—চৈ… আয় আয় চৈ—চৈ…
গৌরবুড়ি এক চোখে ছানি নিয়েও কষ্ট করে সারা পুকুরটায় চোখ বোলায়। কিন্তু না, কোথাও সে হাঁসদুটোকে দেখতে পেল না। বুকটা ধড়াস করে ওঠে। একটা অজানা ভয়। তারপর ভাবল, হয়তো জল থেকে উঠে পাড়ে ডানা ঝাড়ছে। বুড়ি লাঠি ধরে টাল সামলাতে সামলাতে তিন দিকের পাড় প্রায় ঘুরে এল। কোত্থাও নেই। বুড়ি এবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। দুশ্চিন্তা আর হতাশা মনে। খটাশ বা শেয়াল নিল না তো। বাইরে অন্ধকার নেমে আসছে। বুড়ির চোখেও আঁধার। এমন সময় কানে এল কে যেন তার নাম ধরে ঠাম্মা বলে ডাকছে। …” গৌর——ঠাম্মা…”
কিছুক্ষণের মধ্যে পূর্বপাড়ার সহদেব মন্ডলর কিশোরী মেয়ে চাঁপা ছুটতে ছুটতে এল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, “ও ঠাম্মা, দেখবে চল কী কান্ড! তরুণ সংঘের ছেলেরা তোমার হাঁসদুটো মেরে মাংস করে ফিস্টি করেছে। আমাদের কলাবাগানে কাটা মাথা পা পালক সব ফেলে গ্যাচে।”
গৌরবুড়ির আর একটা চোখেও যেন ছানি পড়ে গেল। চাঁপার হাঁপিয়ে যাওয়া মুখটা আবছা হয়ে যাচ্ছে তার চোখের সামনে। বুক ফেটে একটা দীর্ঘশ্বাস অভিশাপ হয়ে বেরিয়ে এল।
———”বলি, ও আঁটকুড়ির ব্যাটারা, কী সব্বোনাশ কল্লি রে আমার! আমি বাঁচব কী করে!”