কবিতা

রেজাউদ্দিন স্টালিন

গুচ্ছকবিতা
ফেরা

আমি তাকে ছাড়ি সে আমাকে ধরে রাখে,
সব ঋতুতেই বসন্ত — বৈশাখে।
ফিরিয়ে নেবে সে নদী গাছ মাটি আর
হৃদয়ের যত অতৃপ্ত অঙ্গার।
চিহ্নবিহীন চলে যেতে হবে একা
অপরূপ যত মুখচ্ছবির দেখা—
মিলবে না আর,ডিভাইন কমেদিয়া—
কাঁদবে সেলফে— সুন্দর শারদীয়া।
অনায়াস যত জীবনের ভালোবাসা,
প্রকল্পভরা স্বপ্নের প্রত্যাশা,
ব্যর্থ প্রেমিক আর তার লোনাজল—
থমকে দাঁড়াবে মেঘদূত অঞ্চল।
নগরের যত বিদ্যুৎ গাড়ি —ঘোড়া,
পার্কের ঘাস নরনারী জোড়া জোড়া
থাকবে সে সব বিনোদন বিষ্ময়,
ফিরে গেলে নেই হারানোর কোনো ভয়।

দায়

যে ঘরে দরোজা নেই
তার কি প্রয়োজন প্রহরীর
ভ্রূণ ধারণে অক্ষম যে গর্ভ
তার কেনো প্রসব যন্ত্রণা
উড়তেই হবে কেনো
যদি না থাকে ডানা তার
প্রবাহ পুতে রাখে যে স্রোত
তাকে স্রোতস্বিনী হতে কে দিব্যি দেয়
মৃত্যুকে ভয় পায় যে জীবন
তাকে বাঁচতে কে বলে

ফলহীন বৃক্ষ সেতো অগ্নিউপাসক

শেকলের শব্দে যে অভিভূত
তাকে মুক্তি দেবে কে

স্পর্ধা

আরেকবার আমাকে দাঁড়াতে হয়েছিলো
সেই সত্যের মুখোমুখি
যেখান থেকে শুরু পারদের পৃথিবী
মানুষের হাড়গোড় আর মজ্জা দিয়ে তৈরি
চোখের নুন আর জিহ্বার কান্না দিয়ে
কর্কট আর মকর ক্রান্তির অন্তিমে
দুঃখের অনিঃশেষ দরোজায়
না মাড়ানো সেই সব গহীন পথ
হৃদয়ের ফাঁক ফোকর
বাতি না জ্বালানো সন্ধ্যার তলদেশ
দেখা যায় না জীবন তার সন্ধিক্ষণে
আরেকবার আমাকে দাঁডাতে হয়েছিলো
নজিরবিহীন দুঃখস্তূপের উপর
ভেঙে খান খান হয়ে যাওয়া আকাঙ্ক্ষা
আর যেখান থেকে ফেরা যায় না
অরব রাত্রির উপর
হতাশার হিংস্রতায় আটকে যাওয়া পদক্ষেপ
শিকার লোলুপ নারকীয়তার মাঝখানে
রক্তচিহ্ন রেখে না যাওয়া তরবারির সামনে
নিকষ কালো বর্ণমালার মুখোমুখি
পাঠ করা যায় না যে সূর্যাস্ত
চিৎকারের প্রতিবিম্ব ঠাসা স্বপ্ন
জানালার দাঁত ভাঙা দৃষ্টির হাতুড়ি
কোনো দেয়াল আঁকড়ে থাকা লতাগুল্ম নয়
হাতের মধ্যে সহজ হয়ে যাওয়া
স্তনের অবাধ্যতা নয়
আকাশের উগরে দেয়া বজ্রের সামনে
আমাকে আরেকবার দাঁড়াতে হয়েছিলো
তুচ্ছ সব সাবধানবাণীর অট্টালিকা
রুটিমোড়া চুল্লির গনগনে শাসনের সামনে
সবুজ আর লালে তৈরি কালোর সংকেত
আর খড়গের এক কোপে বলি দেয়া প্রতিজ্ঞা
ডানা পালক নখ চিবুক আঙুলের
খন্ড খন্ড আর্তনাদের সামনে
আরেকবার আমাকে দাঁড়াতে হয়েছিলো
ভেঙে ফেলা সব উল্লম্ফন
ছুঁড়ে ফেলা কণ্ঠস্বর
টুকরো করা অনুভব
আত্মাসন্ধানী কণ্ঠনালীর পরিণাম
যুক্তির শিরোচ্ছদ খ্যাত বধ্যভূমি
আগ্নেয়াস্ত্র আড্ডা দেয়া সড়ক
অন্তহীন অভিযোগের শ্রোতা—সদা প্রভুর সামনে
আরেকবার দাঁড়াতে হয়েছিলো আমাকে
আমার অহংকার হাঁটু মুড়ে বসতে চেয়েছিলো
এবং মনুষ্যত্ব ক্ষমা প্রার্থনায় নত হতে
কোটি কোটি বছরের শ্রমে তৈরি পা
কি করে উবু হবে
হাজার বছরের ভালোবাসায় তৈরি
এই মনুষ্যত্ব কি করে নত হবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *